প্রাচীন বাংলায় সেলাই করা কাপড় পরাকে অপবিত্র মনে করা হতো। সেজন্যই নারী-পুরুষেরা শাড়ি ও ধুতি পরতেন। মুসলমানরা এদেশে আসার আগে সেলাই করা কাপড় পরা হতো না। মুসলমানরা ধীরে ধীরে এ রীতি চালু করে এবং সমাজে ‘দর্জি’ নামক এক নতুন পেশার উদ্ভব হয়। ধর্মবিশ্বাসে বৈচিত্র‍্য থাকলেও বাংলার হিন্দু-মুসলমানদের পোশাকে খুব একটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় না, বিশেষত নারীদের পোশাকে প্রায় কোনো পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় না।


বাংলায় হিন্দু-মুসলমান দুই ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেই কঠোর পর্দাপ্রথা মেনে চলা হত। সেজন্য বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে পুরুষদের পোশাকের যতটা বর্ণনা পাওয়া যায়, নারীদের পোশাকের ততটা বর্ণনা পাওয়া যায় না। নারীদের ব্যাপারে রক্ষণশীলতা এতটাই প্রকট ছিল যে বিভিন্ন সময়ে পুরুষদের পোশাক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেলেও নারীরা সবসময় প্রায় একই পোশাক পরেছে- শাড়ি। একশো বছরেরও কম সময় আগে বাঙালি সাধারণ নারীরা শাড়ির সাথে ব্লাউজ বা পেটিকোট পরতো না। অভিজাত নারীদের ক্ষেত্রে অবশ্য সে কথা চলে না। ব্রিটিশ শাসনের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে এসে অভিজাত নারীদের ফুল-হাতা গলাবন্ধ ব্লাউজ পরতে দেখা যায়। অনেক পুরুষ তাদের স্ত্রীদেরকে ব্রিটিশ সমাজে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য আলাদা করে পোশাক তৈরি করিয়ে নিতেন।

পোশাকের সাথে মানুষের সম্পর্ক বহু আগের। প্রাচীন গুহাবাসী মানুষ থেকে আজকের আধুনিক মানুষ, সবার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হচ্ছে পোশাক। পোশাকের সাথে আবহাওয়া এবং সংস্কৃতির সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। ভিন্ন ভিন্ন আবহাওয়ার মানুষ বিভিন্ন সময়ে তাদের আবহাওয়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে পোশাক নির্বাচন করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের মতো উষ্ণ অঞ্চলের মানুষ যতটা সম্ভব লম্বা পোশাক বেছে নিয়েছে রোদ থেকে শরীরকে বাঁচাতে। শীতপ্রধান অঞ্চলের মানুষ আঁটসাঁট পোশাক বেছে নিয়েছে প্রধান পোশাক হিসেবে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায়, পোশাক নির্বাচনে যুক্ত হয়েছে রাজনীতি, অর্থনীতি ও সৌন্দর্যবোধ। বিভিন্ন সময়ে বাঙালির পোশাকেও এসেছে পরিবর্তন। আদি বাঙালিদের পোশাকের সাথে এ যুগের বাঙালিদের পোশাকে রয়েছে বিস্তর ফারাক। কখনো শাসকের প্রভাবে, কখনো ধর্মের প্রভাবে বাঙালি তাদের পোশাকে পরিবর্তন এনেছে।


বিভিন্ন প্রমাণ হাতে থাকায় গত কয়েক শতাব্দীতে বাঙালির পোশাকে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে তা যেভাবে বিশ্লেষণ করা যায়, তার আগের সময়ের পরিবর্তন নিয়ে সেভাবে বিশ্লেষণ করা যায় না এবং সেটা নিয়ে কথা বলাও যায় না। বিভিন্ন প্রাচীন ভাস্কর্য ও সাহিত্য থেকে আমরা তার কিছুটা আঁচ করতে পারি মাত্র।



অভিজাত মুসলমানদের মধ্যে উর্দুভাষী নারীদের অনেকে সালোয়ার কামিজ পরলেও বাঙালি মুসলিম নারীরা তা পরতেন না। পরবর্তীতে মুসলিম নারীরা তো বটেই বাঙালি হিন্দু নারীরাও সালোয়ার কামিজ পরতে শুরু করেন। এ সময়ে এসে তো কিশোরী থেকে শুরু করে বৃদ্ধা পর্যন্ত সব বয়সের মাঝেই জনপ্রিয় পোশাক হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে সালোয়ার কামিজ।